বিজ্ঞান মানে হল বিশেষ জ্ঞান। আর এই বিজ্ঞানের
জন্যই মানুষ বর্তমান যুগে এত উন্নতির শিখায় পৌঁছেতে পেরেছে। মানুষের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধির
দ্বারা মানুষ প্রত্যেকটা ঘটনার পেছনের কারণ খুজতে পেরেছে। যার কারনে আমাদের চারিদিকে
বিজ্ঞানের এত জয় জয় কার। কিন্তু সঠিক কারণ জানার মত মানসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তা সবার
মধ্যে থাকেনা। ফলে ঐ সময় জন্ম নেয় কুসংস্কারের। সংস্কার কথাটির অর্থ হল শুদ্ধি। কিন্তু যখন তা অযৌক্তিক
মানসিকতায় পরিগনিত হয়, তখন তা সংস্কার না হয়ে হয়ে যায় কুসংস্কার।
কুসংস্কার
এবং এর উৎসঃ-
প্রত্যেকটা
জিনিস ঘটার পেছনে কিছু না কিছু কারণ থাকে এবং প্রত্যেকটা ঘটনার পেছনেই বিজ্ঞানীরা তার
কারণটাকে আবিস্কার করেছে। কিন্তু বিজ্ঞানের সেই আবিস্কার সব জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি
বা মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারার সাথে মেল খায়নি। ফলে ঐ সময়ই জন্ম নেয় কুসংস্কারের।
মোটাকথা, বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগেও মানুষ এর মনে কুসংস্কারের অবসান ঘটেনি। কুসংস্কার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ব্যাক্তিগত,
সামাজিক বা ধর্মীয়। ব্যাক্তিগত হল যেমন হাঁচির সময় যাত্রা অশুভ। আবার ডায়নি সন্দেহে
কোন মহিলাকে মেরে ফেলা হল সামাজিক কুসংস্কার। সতীদাহ, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন হল
ধর্মীয় কুসংস্কারের উদাহরন।
বিজ্ঞান চেতনা হল সঠিক যুক্তি
যুক্ত সত্যের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসই মানুষকে অন্য কোন অলৌকিক শক্তির বদলে
নিজের উপর বিশ্বাস করাটা শিখায়। বিজ্ঞান সত্য নির্ভর জ্ঞান। আজকের এই মানব সভ্যতার
এত উন্নতির একমাত্র কারণ হল বিজ্ঞান। প্রকৃতির প্রত্যেকটা জিনিসকে কিভাবে ব্যবহার করে
ভালভাবে উপভোগ করা যায় তা বিজ্ঞান চেতনার অবদান। বিজ্ঞান চেতনা না থাকলে মানুষকে হয়ত
মানুষকে আজও জঙ্গলেই বসবাস করতে লাগত। এই বিজ্ঞান চেতনার মাধ্যমেই মানুষ আজ চাঁদে পোঁছে
গেছে। আজ আমরা বিশ্বের যেখানেই তাকাই না কেন সব দিকে শুধুই বিজ্ঞানের জয় জয় কার। জল,
আকাশ, স্থল যেকোন দিকেই হোক না কেন বিজ্ঞান আমাদের এনে দিয়েছে সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্য।
কুসংস্কারকে মানার কারনঃ-
বিজ্ঞান যেকোন
ঘটনার পেছনের কারণকে বের করে তার উপর কাজ করে ফলাফল পরিবর্তন করে। বিজ্ঞানের কিছু সীমাবদ্ধতা
আছে। যেমন- বিজ্ঞান পরীক্ষার ফলাফল ভালো করে দিতে পারবেনা, খেলায় জয় এনে দিতে পারবেনা
ইত্যাদি। তাই কিছু সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নেয় দৈব শক্তির। কারণ, তারা মনে করে যে কিভাবে
কাজ না করে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। আর তাদের এই চলাচল দেখে অন্যান্য মানুষও কুসংস্কারের
আশ্রয় নেয়। কোন কাজ না করে ভাল ফলের আশা করা একজন যুক্তিবাদী মানুষ কখনই করতে পারেনা।
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান
এবং কুসংস্কারঃ-
বিজ্ঞান এবং কুসংস্কার এই দুটি জিনিষকে কখনও একসঙ্গে মানা যায় না। এরা একে অপরের
সম্পূর্ণ বিপরীত। বিজ্ঞান হল পুরোপুরি যুক্তি নির্ভর এবং কুসংস্কার হল যুক্তিবিহীন।
কিন্ত বাস্তব জীবনে বেশীরভাগ মানুষ দুটোকে একসাথে নিয়ে চলে। তারা ঘটনার পেছনের কারণ
জানা সত্ত্বেও বা কোন প্রকার যুক্তি ছাড়াই অলৌকিক শক্তির আশায় কুসংকারের আস্রয় নেয়।
এখনও মানুষ রাস্তায় বিড়াল কাটলে একটু দাড়িয়ে তারপর যাত্রা শুরু করে। তাছাড়া, গ্রহ নক্ষত্রের
বিচার করে আঙ্গুলে আংটি পরে তারপর পরীক্ষা কিংবা ব্যবসা শুরু করে। সাপে কামড় দিলে হাসপাতালে
না গিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যায়। নোংরা ছড়ার জল পান করে সুস্থ হয়ে যাওয়া। গণেশ ঠাকুর দুধ
পান করা। বিভিন্ন প্রকার তাবিজ কবজ ব্যাবহার করা। এই সবই হল আধুনিক যুগের কুসংস্কারের
উদাহরণ।
কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানঃ-
কুসংস্কার
দূরীকরণে সবচাইতে বড় হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। কারণ, একমাত্র বিজ্ঞান চেতনাই পারবে কুসংস্কারের
বেরাজাল থেকে বার করতে। সমাজের সর্বস্তরে বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয়
স্থানগুলিতে নজর রাখতে হবে। কারণ, বেশিরভাগ কুসংস্কার ছড়ায় ঐ সব জায়গা থেকে। কারণ,
কিছু সংখ্যক অসাধু মানুষ সাধারন মানুষকে আস্থার নামে খারাপ ফায়েদা তোলে। সরকারীভাবে
এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে যেখানে বিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন প্রকার বিষয় গ্রামে সাধারন
মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কুসংস্কার
নিয়ে আরও ভালভাবে আলোচনা করতে হবে। কারণ, এরাই হল দেশের ভবিষ্যৎ।
উপসংহারঃ-
বিজ্ঞান এবং কুসংস্কার দুটোই মানব
সৃষ্ট। তাই কুসংস্কার সমাজের বুক থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু খুব কঠিন। কারণ, এটা
চলে আসছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে। আর ভারতবর্ষের মতো এত জনসংখার দেশে সকলের কাছে সঠিক
তথ্য পৌঁছানও কষ্টকর। আর যাদের শিক্ষা কম তাদের মধ্যেই কুসংস্কারের আশ্রয় নেওয়ার প্রবনতা
বেশি। তবুও, একমাত্র সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিজ্ঞান চেতনাই পারবে কুসংস্কারের এই
কালো মেঘকে সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় দিতে।
0 মন্তব্যসমূহ