Sitkal Bengali rochona
শীতকাল
আমদের দেশ ভারতবর্ষে মোট ৬ টি ঋতু দেখতে
পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বসন্ত। এদের মধ্যে বেশীরভাগ সময়ই
আমরা গরম অনুভূত করি। কিন্তু, বাংলায় পৌষ, মাঘ এই দুই মাসকে শীতকাল ধরা হয় এবং ইংরেজি
ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসকে। শীতকালের জন্য সবার মনে একটা আলাদা জায়গা থাকে। কারণ, শীতকাল
অন্যান্য ঋতু থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই সময়ের ঠাণ্ডা কনকনে শীত সকলের মনেই একপ্রকার
আলাদা অনুভূতি ছুয়ে যায়। আজকে এই শীতকাল নিয়েই আমাদের রচনা।
শীতকালে সাধারনত বৃষ্টি হয়না। তাই আকাশকে
সবসময়ই খুব সুন্দর ঘন নীল দেখায়। রোদেরও সেই রকম প্রকোপ থাকেনা। তবে রাত্রি বেলা প্রচণ্ড
কুয়াশা দেখা যায়। এমনকি মাঝে মধ্যে এমনও দিন থাকে যখন দিনের বেলাও সারাদিন কুয়াশা থেকে
যায়। রৌদ্রের কোন ছোয়াই থাকেনা। ঐ দিন গুলোতে মানুষ ঘর থেকে বিশেষ কোন কাজ ছাড়া বের
হয়না। শীতের দিনে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। আর ঠাণ্ডা বেশি থাকায় মানুষ ঘুম থেকেও দেরিতে
উঠে। ফলে দিনের সময়টা যে কখন কেটে যায় খবরই থাকেনা। শীতের দিনের সকালটা সবচাইতে বেশি
সুন্দর থাকে। বিশেষ করে ঐ সুন্দর দৃশ্য ভাল করে উপভোগ করা যায় গ্রামে। ঘন কুয়াশার চাদরে
যখন সম্পূর্ণ এলাকা ঢেকে থাকে সেই মনমুগ্ধকর দৃশ্য মুখে বলে প্রকাশ করা কঠিন। ঐ সময়
গাছের পাতা ঝরা শুরু করে নতুন পাতা গজানোর জন্য।
শীতের সময়েই চাষিরা নিজেদের ঘরে
ধান তুলে। ঐ সময় সব্জির কোন কমতি থাকেনা। প্রচুর শাকসবজি ঐ সময় উৎপাদিত হয়। আবার ঠাণ্ডার
দিনে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। যেটা সবাইর কাছে খুব প্রিয়। ঐ সময় বিভিন্ন ছোট বড় অনেক
উৎসব একটার পর একটা চলতেই থাকে। ঐ সময়ের একটা খুবই সুস্বাদু পানীয় হল খেজুরের রস। ঐ
সময় প্রায় প্রত্যেক খেজুর গাছেই দেখা যায় একটা কলস আটকানো আছে। সকাল সকাল একজন লোক
এসে সেই কলস থেকে রসগুলুকে সংগ্রহ করতে। গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ উনুনে রান্না করায়
শীতের সময়ে রাতের বেলায় সবাই আগুনের পাশে বসে গল্প করে। সেই দৃশ্যটা খুবই সুন্দর লাগে
দেখতে।
তবে এই সব দৃশ্য গ্রামেই বেশি
দেখা যায়। শীতের সময়ে শহরের পরিবেশ থাকে গ্রাম থেকে একটু আলাদা। শহরে গ্রামের মত সেই
রকম শীত খুব কম অনুভূত হয়। কারণ শহরের ঘন ঘন বাড়িঘর, দূষণ, গাছপালার অভাব এই সব কারনে
শীত গ্রাম থেকে তুলনামূলক কমই অনুভূত হয়। শহরে শীতের সকালও অন্য রকম থাকে। বড় বড় শহরে
কুয়াশার বদলে দেখা দেয় ধুয়াসা। ধূয়া আর কুয়াশা মিলে হয় ধুয়াসা। ধুয়াসার কারনে বহু শহরে
কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ চলে যায় সম্পূর্ণ কুয়াসাচ্ছন্ন। ঐ সময় ২ ৩ মিটার দুরের জিনিস
দেখতেও কষ্ট হয়ে যায়। ফলে ঘটে যায় বহু দুর্ঘটনা।
শীতকাল বহু মানুষের জন্য আনন্দদায়ক
হলেও একটা শ্রেণীর মানুষের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তা হল গরীব শ্রেণীর মানুষ। টাকার অভাবে
বহু গরীব মানুষ নিজেদের জন্য শীতের পোষাক কিনতে পারেনা। বহু গরীব মানুষ রাস্তায় যারা
বসবাস করে শীতের সময় এক টোকরো কাপড়ের অভাবে অনেক সময় মারা যায়। শীতের পোষাকের অভাবে
অনেক ছুটো ছুটো বাচ্চাদের দেখা যায় রাস্তার ধারে জরোসরো হয়ে বসে থাকতে। তবে, এমন সময়ে
বহু মানুষকে বা বিভিন্ন সমাজ সেবকদের দেখা গিয়েছে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিতে। তারা
বিভিন্ন স্থানে বহু গরীব মানুষদের বস্র দান করতে দেখা যায়।
শীত ঋতু অনেক মানুষেরই প্রিয়।
প্রত্যেক ঋতুর নিজস্ব একটা আলাদা রূপ আছে। তবে শীত ঋতুর মজা একদম আলাদা। তবে কালের
ক্রমে আজকের দিনে শীতের সেই আমেজ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তবে আমরা আসা করি শীত ঋতু যেন
প্রত্যেক বারই মানুষের মনে এক নতুন আমেজ নিয়ে আসে সবসময়।
0 মন্তব্যসমূহ