Bengali essay on global warming
বিশ্ব উষ্ণায়ন
ভূমিকাঃ-
বর্তমান
পৃথিবী হল অগ্রগতির। যেখানে প্রত্যেকটা মুহূর্তে নতুন নতুন জিনিষের আবিস্কার হচ্ছে।
যা, মানবজীবনকে করে তুলছে আরও আরামদায়ক এবং সুবিধেভরা। বিজ্ঞানের এই ইতিবাচক দিকটা
মানব জাতির জন্য কল্যাণকর হলেও পরবর্তী সময়ে বহু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং এখনও হয়ে
যাচ্ছে। যেমন, বিভিন্ন ধরনের দূষণ থেকে শুরু করে গাছপালা ধ্বংস আরও অনেক কিছু। তারই
মধ্যে আর একটি নাম হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন। আজ এই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়েই
আমদের আজকের এই প্রতিবেদন।
বিশ্ব উষ্ণায়ন কিঃ-
আমাদের চারিপাশে প্রায়ই আমরা গ্লোবাল
ওয়ার্মিং এর নাম শুনেছি। এমনকি বই বা টিভি বা ইন্টারনেট খুললেও আমরা এই শব্দটা শুনতে
পাই। আসলে এই জিনিষটা কি? খুব সহজ ভাষায় যদি বলি, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা সময়ের সাথে
সাথে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাকে বলা হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। আধুনিক
পৃথিবীতে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। যার কারনে বাতাস হয়ে পরেছে বিষাক্ত। আর
বিষাক্ত বাতাসগুলি সবসময় উষ্ণ থাকে। কারণ, তারা সূর্যের আলোকে পৃথিবী থেকে ফিরে যেতে
দেয়না, ধরে রাখে। যার কারনেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যার থেকে সৃষ্টি
হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়ন আজকের দিনে সবার জন্য একটা বড়
চিন্তার বিষয়।
পরিসংখানঃ-
গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে বিজ্ঞানীরা
ক্রমাগত বিভিন্ন গভেষনা করে যাচ্ছেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৯২০-১৯৩০ পর্যন্ত
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার একই ছিল। যা বহু বছর ধরে চলে আসছিল। কিন্ত, বিগত প্রায় ১০০ বছরে
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ০.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তারা এও বলেছে যে, গত ১০০
বছরে যত বেরেছে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এর থেকে প্রায় ৩ গুন বেশি বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ
১.৫ থেকে ২.০ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। যা খুবই চিন্তার বিষয়। একবিংশ শতাব্দী অর্থাৎ ২১০০
সালের শেষে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হবে প্রায় ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি। তাহলে বুঝতেই পারছেন,
এখনের সময়েই মানুষ গরমে নাজেহাল অবস্থা। তাহলে, আগত বছরগুলিতে কি খারাপ অবস্থা হয়ে
দাঁড়াবে।
সৃষ্টির কারনঃ-
বর্তমান পৃথিবীর এই খারাপ অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী
হল মানুষ। মানুষের ক্রিয়া কলাপের জন্যই আজকের পৃথিবী এত অসুস্থ। মানুষ তার নিজ স্বার্থে
এতটাই মগ্ন হয়ে পরেছে যে কোন জিনিষটা সমাজের বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সেটা জেনেও না
জানার ভাঙ করছে। যার কারনে বিশ্ব উষ্ণায়ন আমাদের কাছে এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন সৃষ্টির কারণ হল গ্রিন
হাউস গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত। গ্রিন হাউস গ্যাস হল যেমন- কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সালফার- ডাই-অক্সাইড,
নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্যাসগুলি। বায়ুমণ্ডলে
এদের পরিমাণ সবসময় নির্দিষ্ট থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমান যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান
ছাড়া মানুষ কিছু ভাবার চিন্তাই করেনা। ফলে মানুষের সৃষ্ট যানবাহন, কলকারখানা, পারমানবিক
চুল্লী ইত্যাদি থেকে ক্রমাগত ধূয়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে ফেলেছে এবং আরও করেই
যাচ্ছে। আর এই দূষিত বাতাসগুলির মধ্যে থাকে গ্রিন হাউস গ্যাস। গ্রিন হাউস গ্যাসের তাপ
ধারন ক্ষমতা অনেক বেশি অর্থাৎ এরা তাপকে ধরে রাখতে পারে। তারা পৃথিবীতে আগত সূর্য রশ্মির
তাপকে ধরে রাখে, ফিরে যেতে দেয়না। এর কারনে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এখন, ঘটনা হচ্ছে যে গ্রিন হাউস
গ্যাসের পরিমাণ যদি নির্দিষ্ট থাকে তাহলে তো কোন চিন্তা নেই। কিন্তু ক্রমাগত দূষণের
ফলে এদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু এদের পরিমাণ বাড়ছে তাই তাপ ধারনের পরিমাণও বাড়বে
এবং উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে এখন তা ই হচ্ছে।
তাছাড়া, নির্দয়ের মত গাছপালা
কাটার এবং বন ধ্বংস করার ফলেও গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে।
পরিবেশে প্রভাবঃ-
বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিবেশে
প্রভাব মারাত্মক। হয়ত, গত ১০০ বছরে প্রায় ০.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি আমাদের কাছে অনেক কম লাগছে।
কিন্তু, এই .০.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধিই পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি
পাওয়ার ফলে মেরু প্রদেশের বরফ ক্রমাগত গলে যাচ্ছে। ফলে, ওইখানের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে। বহু প্রানি বিলপ্তির পথে এবং বহু বিলুপ্ত। বরফ গলে যাওয়ায় পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু স্থান এখন জলের তলায় চলে গেছে। বহু
উপকূলবর্তি এলাকায় এখন অল্প জোয়ারে জল উঠে যায়। যার কারনে মানুষ এখন ঐ খান থেকে বাড়ীঘর
ছাড়তে হচ্ছে।
উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর
যে সব স্থানে বৃষ্টিপাত কম হয়। ওইসব স্থানে শুখা মসরুম পুরু জল শূন্য হয়ে পরে। ফলে
মানুষকে দূর দূরান্ত থেকে জল আনতে হয়। তখন, বিভিন্ন পশুদের অবস্থা করুণ হয়ে পরে। জলের
অভাবে কৃষিকাজেও খুব খারাপ প্রভাব পরে।
প্রাণীজগতে প্রভাবঃ-
বিশ্ব উষ্ণায়ন সরাসরি
প্রাণিজগতেও প্রভাব ফেলে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে মেরু প্রদেশের বরফ গলে যাওয়ায় বহু
নতুন নতুন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এরা এতদিন বরফের মধ্যে
আটকে ছিল। বরফ গলে যাওয়ায় তারা পরিবেশে ছরিয়ে পরছে। ফলে নতুন নতুন রোগের সমাগম হচ্ছে।
এদের কোন ঔসধ এবং টিকা এখনও নেই। ফলে ভবিষ্যতে বড়সড় মহামারীর সম্মুখীন প্রানীজগতকে
হতে হবে।
তাছাড়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়
কৃষিক্ষেত্রে এর প্রভাব পরেছে। ফসল উৎপাদরে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হচ্ছেনা সময়মত।
ফলে বহু ফসলের জমি এখন চাষের অযুগ্য হয়ে পরেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিভিন্ন জঙ্গলে
এবং ফসলে হঠাৎ আগুন লাগতে দেখা যায়। ফলে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ফসল ধ্বংসের
ফলে কৃষকদের বহু ক্ষতি হচ্ছে। বহু স্থানে এখন প্রায় সময়ই খরা দেখা দেয়। জলের অভাবে
বহু স্থান এখন বসবাসের অযুগ্য হয়ে পরেছে।
প্রতিকারের উপায়ঃ-
বিশ্ব উষ্ণায়নের সমাধান
থাকলেও দুঃখের বিষয় হল দ্রুত কোন সমাধান নেই। তবুও আমরা যদি নিজেদের স্বভাবের মধ্যে
পরিবর্তন আনতে পারি তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রন করা অবশ্যই সম্ভব।
প্রথমত, আমাদের জীবাশ্ম
জ্বালানি বন্ধ করতে লাগবে। যেমন- পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, কয়লা ইত্যাদি জিনিষের দহন
ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে লাগবে। কারণ, এরাই হল গ্রিন হাউস গ্যাসের সবচাইতে বড়
উৎস। এদের দহনের ফলেই বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ এত বেশি। এদের বদলে আমাদের বায়ুশক্তি,
সৌরশক্তি, জলশক্তি ইত্যাদির উপর নির্ভর হতে হবে। কারণ, এদের দ্বারা সৃষ্ট শক্তিতে দূষণ
হয়না।
দ্বিতীয়ত, বৃক্ষ নিধন সম্পূর্ণ
বন্ধ করতে লাগবে। সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। যার কারনে মানুষ নিজেদের
চাহিদা এবং বসবাসের জন্য প্রতিনিয়ত বন ধ্বংস করে যাচ্ছে। আর আমরা জানি যে গাছ দূষিত
বায়ুকে পরিসূধিত করে। ফলে প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধনের ফলে দূষিত গ্যাসের পরিমাণ আরও বাড়ছে।
বৃক্ষনিধন বন্ধের সাথে সাথে
প্রত্যেক মানুষের নিজের উদ্যোগে বৃক্ষরূপণ করার প্রতিশ্রুতি নিতে লাগবে। একমাত্র বৃক্ষরূপণই
পারবে দ্রুত বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রনে আনতে। তাছাড়া বৃক্ষরূপণ যে শুধু তাপমাত্রা
কমাবে তা নয়। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ যেমন- বায়ু, জল, মাটি ইত্যাদি দূষণও কমাবে।
উপসংহারঃ-
আমরা সকলেই জানি বর্তমান পৃথিবীর
সবচাইতে বড় চিন্তার বিষয় হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। আর এর জন্য দায়ী একমাত্র মানুষ। তাই এই
বিশ্ব উষ্ণায়নকে আটকাতে সমস্ত মানবজাতিকে একসঙ্গে সমাধানের পথে নামতে লাগবে। কারণ একমাত্র
মানুষই পারবে এই বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে।
এর থেকে বাচার একমাত্র উপায় সতর্কতা।
আমাদের সেই সতর্কতা অবলম্বন করে পূনরায় পৃথিবীকে সুস্থ করে তুলতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ
প্রজন্ম সুস্থ বাতাসে শ্বাস নিতে পারে। আর আমরা আশা করি সকালে মিলে একসাথে কাজ করলে
অবশ্যই আমরা এই বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারব।
0 মন্তব্যসমূহ