Bengali essay on lockdown


Bengali essay on lockdown 


লকডাউন

ভূমিকাঃ-
             এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সংগ্রামে মানুষকে বা অন্যান্য প্রানীকে কত কিছুরই না সম্মুখীন হতে হয়। বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড় ইত্যাদি। এই সবকিছুর সম্মুখীন হয়ে নিজের অস্তিত্তের লড়াই করে সমস্ত প্রাণীজগতকে বেঁচে থাকতে হয়। এরই মাঝে বর্তমান প্রজন্মের কাছে নতুন একটি বিষয়, যা হল লকডাউন। একবিংশ শতাব্দীতে ভারতে লকডাউন শব্দটির সাথে মানুষের নতুন পরিচয় । এর আগে কখনও এমন কিছুর সম্মুখীন বর্তমান প্রজন্মের মানুষকে হতে হয়নি। তাই লকডাউন নিয়ে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।
 লকডাউন কিঃ-
                     লকডাউন শব্দটির বাংলা অর্থ হল “তালাবদ্ধ”। মানে দিনের একটা সময়, যে সময়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবেনা, ঘুরাফেরা করতে পারবেনা। সম্পূর্ণ তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হবে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ সম্পূর্ণরুপে ৭ বা ১৪ বা ২১ দিনের লকডাউন অবস্থায় থাকতে হয়। ঐ সময় কোন রকমেই বাড়ি থেকে বেরোনো যাবেনা বিশেষ কোন দরকার ছাড়া। অফিস, আদালত, বিদ্যালয় ইত্যাদি সব কিছু এই সময় বন্ধ থাকে।
                        লকডাউন ঐ সময়ই দেওয়া হয়, যখন দেশে কিংবা রাজ্যে এমন কোন পরিস্থিতি চলে আসে  যখন একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের মিলামিসা করাটা বিপদজনক হয়ে পরে। এখন এর কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন, দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, কোন প্রকার সন্ত্রাসী হামলা হলে বা  কোন প্রকার সংক্রমণকারী বিষাক্ত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যদি ছরিয়ে পরে। আর একবিংশ শতাব্দীর এই লকডাউন হল সংক্রমণকারী করোনা ভাইরাসের জন্য।
ইতিহাসে লকডাউনঃ-
                                 লকডাউনের সাথে ভারতীয়দের পরিচয় একবিংশ শতাব্দীতে প্রথম হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর আগে অনেকবার দেওয়া হয়েছিল। তবে করোনার লকডাউনই সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী। আমেরিকাতে ৯/১১ এর সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পরে ৩ দিন এর লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। ২০০৫ এর ডিসেম্বর মাসে এক দেশে দাঙ্গা আটকানোর জন্যও লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। এপ্রিল ২০১৩ তে বোস্টেন শহরে সন্ত্রাসীদের খোজ করার জন্য লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া প্যারিসেও ২০১৫ তে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। এমন অনেক দেশ এখনও আছে যেখানে গৃহযুদ্ধের দরুন ওখানকার মানুষকে লকডাউন অবস্থার মতই জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
                                এছাড়া ইতিহাসে আগে এমন বহু সংক্রমক রোগের ঘটনা শুনা গেছে যেখানে মানুষ লকডাউনের মতই জীবনযাপন করেছে।
কিভাবে এর শুরুঃ-
                              ভারতবর্ষে লকডাউনের সূচনা হয় ২০২০ এর মার্চ মাস থেকে। কারণ, ঐ সময়ই করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ধীরে ধীরে ভারতে বাড়তে শুরু করে। করোনা ভাইরাস প্রথমে চিনের একটি শহরে প্রথম ধরা পরে। তারপর ঐ খান থেকে ইউরোপ হয়ে ভারতে ছরিয়ে পরে। করোনা ভাইরাস হল একধরনের সংক্রমক রোগ, যা একজন থেকে আরেকজনে ছরিয়ে পরে। যার দরুন ভারতেও খুবই দ্রুত এই ভাইরাস ছরিয়ে পরছিল। আর এখনকার সময়ে মানুষ ভ্রমন করে বেশি। তাই এই ভাইরাস ঘটিত রোগীর সন্ধান প্রত্যেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছিল। তাই একে দ্রুত দমন করার জন্য ভারত সরকার লকডাউন ঘোষনা করে। কারণ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের যে চেইন থাকে তা ১৪ দিনে ভেঙ্গে যায়।  যদি লকডাউন দ্রুত না দেওয়া হত তাহলে ভারতবর্ষের মত এত জনসংখার দেশে মানুষ দ্রুত আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যেত।
                        যদিও লকডাউন দেওয়া সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হইনি। কারণ, পরবর্তী সময়ে প্রচুর লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরে।  
স্বাভাবিক জীবনে এর প্রভাবঃ-
                                               হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রচণ্ডভাবে আঘাত পরে। বিশেষ করে মধ্যম ও নিন্মবর্গের মানুষের জীবনে চলে আসে বিরাট হাহাকার। দিনমজুরি কাজ যারা করে তাদের দেখা দেয় খাবারের অভাব। দিনমজুরি কাজ করা মানুষ দিন আনে দিন খায়। ফলে তাদের পক্ষে সংসার চালানো দায় হয়ে পরে। ছুটো কোম্পানি, দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত মানুষেরাও কিছু দিন এর মধ্যেই সাংসারিক অভাবের সম্মুখিন হয়।
                            সবথেকে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হয় বাড়ি থেকে যারা দূরে ছিল। তারা না বাড়ি আসতে পারছিল, না ওইখানে থাকতে পারছিল। কারণ, হোটেল, ভাড়াবাড়ি সবকিছু থেকেই মানুষকে বের করে দেওয়া হচ্ছিল। আর বাড়ি আসার জন্যও তাদের কাছে কোন রাস্তা ছিলনা। কারণ, ট্রেন, বাস, প্লেন সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক মানে যারা নিজ রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে থেকে খেয়ে কাজ করে, তারা পরেছিল মহাবিপদে। তাদের কাছে না থাকার জায়গা ছিল না খাওয়াদাওয়ার জন্য টাকা ছিল। ফলে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা। তাই অন্য কোন রাস্তা না পেয়ে পায়ে হেঁটে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। শতশত কিমি রাস্তা হেঁটে পারি দেয় নিজ বাড়ির উদ্দেশে।  ঐ দৃশ্য ছিল খুবই কষ্টদায়ক।  
                             ছাত্রছাত্রীদের স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পড়াশুনার ক্ষতি হয় অনেক। এমন বহু মানুষ যারা কয়েকবছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল প্রতিযোগীতামুলক পরীক্ষা দেওয়ার। তাদের পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে পরে। ফলে, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পরে।
                            তবে এই কঠিন সময়ে বহু মানুষকে দেখা গিয়েছে গরীব মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে। তারা তাদের সাধ্য মত যতটুকু সম্ভব মানুষকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দেয়। ফলে গরীব মানুষের এই অন্ধকার সময়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি মেলে। এমনকি মানুষ শহরে চলাফেরা করা কুকুর, বিড়াল ঐ সব প্রাণীদেরও খাবার দেয়। কারণ, লকডাউনে মানুষ ঘরে থাকায় ওদেরও খাবারের অভাব দেখা দেয়।   
পরিবেশে প্রভাবঃ-
                             প্রত্যেকটা ঘটনারই ভাল এবং খারাপ প্রভাব আছে। খারাপ প্রভাবের ব্যাপারে ত বলা হয়েছে। এখন লকডাউনের ভাল প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। লকডাউন সবচাইতে ফলপ্রদ হয়েছে পরিবেশের জন্য। কারণ, মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দূষণের পরিমাণ খুবই কমে যাওয়ায়, প্রকৃতি যেন নতুন ভাবে সুসজ্জিত হচ্ছিল। কলকারখানা থেকে যান চলাচল প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরু পৃথিবীতে। যার দরুন দূষণ সম্পূর্ণ কমে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই যেন প্রকৃতি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিল। এমনও দেখা যাচ্ছিল যে বহু দুরের কোন পাহাড় হঠাৎ চোখে দেখা পরছিল। মনে হচ্ছিল যেন, প্রকৃতি নিজ থেকেই লকডাউন ঘোষণা করেছিল নিজেকে নিজে পুনরায় সম্পূর্ণভাবে জীবিত করার জন্য।
                            তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের পশুপাখিদেরও চোখে ধরা পড়ছিল। বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলে বিভিন্ন ধরনের মাছের সমাগম দেখা যায়। যেই দৃশ্য ছিল প্রায় বিলুপ্ত। বিভিন্ন পাখিরা যেন মনের আনন্দে বিনা ভয়ে উড়ান দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন পশুপাখিরা মানুষকে চিড়িয়াখানায় বন্ধ করে, নিজেরা মনের আনন্দে ঘুরাফেরা করছে। তখন একটা জিনিস সব্বাইই অনুভব করতে পেরেছিল যে কেমন লাগে যখন একটা প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় বন্ধ করে রাখা হয়। হয়ত এই লকডাউন মানুষকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যই প্রকৃতি এই নির্মম পড়িহাস।
উপসংহারঃ-
                    পরবর্তী সময়ে লকডাউন উঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, মানুষ পুনরায় পুরনো ছন্দে ফিরে আসা শুরু করে। কিন্তু, তারই মাঝে শুরু হয় করোনার ২য় ডেউ। বহু মানুষ বর্তমানে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, টিকাকরণও শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই আমরা পুনরায় আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব। তবে, সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্যই জরুরী। কারণ, ভাইরাসটি এখনোও সম্পূর্ণরূপে দমন হয়নি। তাই, সবসময় মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা এবং লোকজন থেকে সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলা দরকার।       

 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ