Bengali essay on online class

 Bengali essay on online class




অনলাইন ক্লাস

ভূমিকাঃ-
               সৃষ্টির আদিকাল থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন আমরা দেখতে পেয়েছি এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীরাও সেই পরিবর্তনকে মানিয়ে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। যারা এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে পালটাতে পারেনি, তারা পরবর্তী সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা সমাজের উন্নতির ধারা থেকে পিছিয়ে পরেছে। আজকে আমরা সেই পরিবর্তনের আরেকটি উদাহরণ “অনলাইন ক্লাস” সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন পেস করব। কি এই অনলাইন ক্লাস? কিভাবে এর শুরু? কি এর ভবিষ্যৎ? তা নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন। 
অনলাইন ক্লাস কিঃ-
                           অনলাইন ক্লাস বলতে, যে ক্লাস ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। অর্থাৎ, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাস করতে পারবে। শুধু মোবাইল বা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ভাল ব্যাবস্থা থাকলেই চলবে। শিক্ষক ওনার নিজের বাড়িতে বসেই ক্লাস করাতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপ, যেমন- জুম বা গুগল ডুও এর সাহায্যে ভিডিও কলে ক্লাসগুলো করা হয়। বাকি বিভিন্ন নোটগুলি বিশেষ করে হোয়াটস অ্যাপ এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেওয়া হয়। ফলে সরাসরি শিক্ষকের সাথে বিদ্যালয়ে দেখা করার কোন প্রয়োজন পরেনা। এমনকি, অনলাইন পরীক্ষাও নেওয়া হয় বাড়িতে বসে।     
কিভাবে এর শুরুঃ-
                              প্রথমত, বিজ্ঞানের যুগে আমরা সবাই ধীরে ধীরে অনলাইনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। কারণ, এখন প্রায় সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন এবং সঙ্গে  ইন্টারনেট চলে এসেছে। যার কারনে সবাই অনলাইন বিদ্যুৎ, মোবাইল, গ্যাস ইত্যাদির বিল অনলাইন বাড়িতে বসে পেমেন্ট করছে। এমনকি ব্যাংকের লেনদেনও মানুষ ঘরে বসে করে ফেলছে। ফলে দেখা যাচ্ছে যিনি একবার অনলাইন কাজ শুরু করে দিয়েছেন, উনি পরবর্তী সময়ে আর অফলাইন আসছেন না।
                           দ্বিতীয়ত, অনলাইন ক্লাস হঠাৎ শুরু হওয়ায় সবার মানিয়ে নেওয়াটা প্রথম দিকে কষ্ট হলেও এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর, হঠাৎ শুরু হওয়ার পেছনে কারণ হল লকডাউন। করোনা ভাইরাস যখন সবদিকে সংক্রমিত হচ্ছিল, তখন ভারত সহ প্রায় সারা পৃথিবীতে লকডাউন ঘোষিত হয়। ফলে স্কুল, কলেজ সহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। ত পড়াশুনার যাতে কোনপ্রকার ক্ষতি না হয়, তার জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। ফলে, ভাইরাস সংক্রমণের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে এবং পড়াশুনারও কোন ক্ষতি হবেনা।                                    
 সুবিধাঃ-
              প্রত্যেকটা জিনিষেরই সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই আছে। অনলাইন ক্লাসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, যে বাড়িতে বসেই সবধরনের ক্লাস করা যাবে। বাড়ি থেকে বেরোনোর কোন দরকার নেই। ফলে করোনার মত এত ভয়াবহ পরিস্তিথিতে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে না বের হয়য়েও নিজেদের পড়াশুনা ঠিক রাখতে পারবে।
              তাছাড়া, অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারনে পড়ুয়ারা বাড়ি থেকে কিছুদিনের জন্য বাইরে থাকে। ফলে তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারেনা। যদি অনলাইন ক্লাস চলে, তবে তারা যেকোন জায়গা থেকেই ক্লাস করতে পারবে। পড়াশোনার কোন ক্ষতি হবেনা। অনলাইন ক্লাস চললে পড়ুয়ারা অতিরিক্ত কিছু সময়ও পায়। কারণ, বিদ্যালয়ে যেতে আসতে যে সময়টা লেগে যেত, ওইটা বেঁচে যায়।     
অসুবিধাঃ-
               তবে অনলাইন ক্লাসে সুবিধার থেকে বর্তমানে অসুবিধার সম্মুখীন বেশি হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক এবং অভিবাবকদের। ভারত হল উন্নয়নশীল দেশ। প্রায় সব জায়গায় ইন্টারনেট থাকলেও স্পীড এত ভাল থাকেনা। ফলে মোবাইল থাকা সত্ত্বেও অনেকে ক্লাস ভাল করে জয়েন করতে পারেনা। এমনকি, শহরাঞ্চলেও অনেক সময় নেট পরিষেবা খারাপ থাকে। ফলে ক্লাস সবাই ভাল করে জয়েন করতে পারেনা।
              অনলাইন ক্লাসে সমস্যার সম্মুখীন হয় গরীব পরিবার গুলো। সন্তান ক্লাস জয়েন করতে গেলে মোবাইল লাগবে। আর লকডাউনের মধ্যে সংসার চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে তারা, এর উপরে মোবাইল কিনে দেওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে, মোবাইলের জন্য অনেক অল্পবয়সী পড়ুয়াদের আত্মহত্যা করতেও শুনা গেছে। 
             আবার, অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রীদের হাতে মোবাইল চলে আসায় তারা পড়াশুনা ছাড়া ভুল পথে পা দিচ্ছে। কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ক্লাসে জয়েন করলেও ঠিক মত মনোযোগ দেয়না। আর শিক্ষকের এই ব্যাপারে কিছু করার থাকেনা। কারণ, সবাইকে সামনা সামনি থেকে দেখতে পাওয়া যায়না।
              আর দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদেরই ক্লাস ফাকি দেওয়ার মানসিকতা থাকে। ফলে, বর্তমানে অনলাইন ক্লাস চললেও লাভ সেই রকম হচ্ছেনা।     
               
ভবিষ্যৎঃ-
                অনলাইন ক্লাসের ভবিষ্যৎ যদি বলি, তাহলে একটা কথা ঠিক যে ভবিষ্যৎ অনলাইন ক্লাসেরই। হয়ত, যে পরিবেশটা আজ থেকে ৫ বছর পরে আসার কথা। করোনার লকডাউনের কারনে সেই পরিবেশ এখন এসে পরেছে। আর যে মানুষ একবার অনলাইন এসে পরেছে তাকে অফলাইনে আনা প্রায় অসম্ভব।
               বিজ্ঞানের এই আধুনিক জীবনে সবাইয়ের কাছে সময়ের অভাব। এখন কোন মানুষই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে চায়না। যতটুকু সম্ভব বাড়িতে বসেই সব কাজ করে ফেলতে চায়। ফলে মানুষ অনলাইন চলে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
               আর যদি বলি অনলাইন ক্লাসের কথা। আমেরিকা, ইউরোপ, জাপানের মত দেশগুলিতে অনলাইন ক্লাস আগেই শুরু হয়ে গেছে। ভারতেও এখন শুরু হয়ে গেছে। তাই, এই কথাটা একদম নিশ্চিত যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনলাইনেরই।    
উপসংহারঃ-
                    ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনলাইনেরই, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, সময়ের সাথে মানুষ উন্নত হচ্ছে। সব কিছু এখন আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। তবে উন্নতির সাথে সাথে আমাদের একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, অনলাইন যেন সর্বদা আশীর্বাদ হিসাবেই থাকে, অভিশাপ যেন না হয়। কেননা, ইন্টারনেট জিনিষটা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু, অপ্রাপ্তবয়স্করা যেন ভুল পথে পা না দেয়। সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর আশা করব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই অনলাইন জিনিষটার সঠিক ব্যাবহার করবে এবং নিজের ও দেশের ভবিষ্যৎ সঠিক দিকে নিয়ে যাবে।

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ