Bengali essay on corona virus

Bengali essay on corona virus

         করোনা ভাইরাস- এক মহামারির নাম 


ভূমিকাঃ- 

               এই পৃথিবীর সুন্দর রূপ যেমন মানুষকে সময়ে সময়ে মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। তেমনি, সময়ে সময়ে অসহায়ও করে দিয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেখা গেছে, যে এক এক সময় এক এক মহামারি পৃথিবীর বহু মানুষ এর প্রান নিয়েছে। 
              মানুষ প্রযুক্তিতে যতই এগিয়ে যাক না কেন, সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখিন ও হতে হয়েছে । তারই মধ্যে বর্তমান পৃথিবীর নতুন চ্যালেঞ্জ করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী এই নতুন প্রাননাশী মহামারি ভাইরাস নিয়েই আজকের আমাদের এই রচনা।


মহামারিঃ-

                   একবিংশ শতাব্দীতে এই মহামারির নাম আমরা শুনেছি বটে, কিন্তু কখনও এর সম্মুখীন হইনি এর আগে। পৃথিবীতে মহামারির এক বড় ইতিহাস আছে। এরই মধ্যে এক নতুন পালক যুক্ত হয়েছে, করোনা মহামারি।  করোনাকে  বুঝতে হলে মহামারি সম্পর্কে ধারনা থাকতে লাগবে। 
                   
                    সারা পৃথিবীতে যখন কোন ভাইরাস ছরিয়ে পরে এবং একসঙ্গে বহু মানুষ তাতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে মহামারি বলে। মহামারি রোগ কতটা মারাত্মক, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে কত দ্রুত ছরাচ্ছে তার উপর। মহামারি বা পেন্ডামিক শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ প্যানডেমোস থেকে। প্যান মানে প্রত্যেক এবং ডেমোস মানে হল জনসংখ্যা।


করোনা ভাইরাসঃ-  

                                        করোনা ভাইরাস এর নাম নেওয়া হয়েছে ল্যাটিন শব্দ থেকে। করোনা এর মানে হল ক্রাউন বা wrath । জুন আলমেইডা এবং ডেভিড টাইরিল, যারা প্রথম মানব শরীরে করোনা ভাইরাস নিয়ে গভেষনা করেন। এটি একই RNA সম্পর্কিত ভাইরাসের একটি গ্রুপ, যা স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের মধ্যে রোগ ছড়ায় । ভাইরাস হল একটি আণুবীক্ষণিক জীব, যা কেবলমাত্র সজীব কোশেয় বংশবিস্তার করতে পারে। 
                                       
                                       করোনা ভাইরাস মানব শরীরে প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৬০ সালে। COVID-19 হল করোনা ভাইরাস এর একটি নতুন STRAIN, যা মানব শরীরে এর আগে কখনও দেখা যাইনি।


                রচনার বই যা আপনার জন্য খুবই সাহায্যকারী  হবে।


উৎসঃ-

              করোনা ভাইরাস এর সঠিক উৎস কোথা থেকে তা নিয়ে আজও সবার মধ্যে তর্কবিতর্ক বর্তমান। কেউ কেউ বলছে চিনের কোন এক গভেষনাগাঁড়ে একে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে চিনের একটি শহর উহান থেকে  ভাইরাস এর উৎপত্তি। তবে উহান শহরকেই বেশী প্রাধান্য  দেওয়া হয়েছে। কারণ, ঐ শহরে একটি মাংসের বাজারে বিভিন্ন ধরণের জীবজন্তু কেনাবেচা চলে এবং ঐ সকল প্রাণী থেকেই ভাইরাসটি মানুষএ প্রবেশ করে এবং পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। 

সংক্রমণ এবং লক্ষণঃ- 

                                           করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক রোগ, যা কাছাকাছি একজন থেকে আরেকজনে ছড়াই। তবে ভাইরাসটি কীভাবে ছড়ায় তা নিয়ে বড় বড় বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে WHO কেউই সম্পূর্ণ  নিশ্চিত হতে পারেনি। প্রথম দিকে ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজনে ছুঁয়াচের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে পরিবেশ থেকেও মানুষ এর মধ্যে সংক্রমিত হতে থাকে।

                                          করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ কিংবা মারা যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব। কারণ, এমনও মানুষ দেখা গেছে যাদের শরীরে ভাইরাসের হদিশ মিললেও কোন প্রকার লক্ষণ ছিল না। এর মূল লক্ষণ গুলি হল জ্বর, গলা অ মাথা ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট।  

                                        আক্রান্ত ব্যাক্তির মধ্যে কোন প্রকার উদ্রেক দেখা দিলে উপসর্গ অনুযায়ী বাইরে থেকে চিকিৎসা করা হয় এবং এক্ষেত্রে রোগীকে আইসোলেসনে রাখা হয়। 

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ-

                                      আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এর কোন নির্দিষ্ট প্রতিরোধক নেই। এর একমাত্র প্রতিরোধক হচ্ছে টিকাকরন। তবে কিছু সতর্কতার মাধ্যমে একে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ সম্ভব। মানুষে মানুষে সবসময় সামাজিক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ৭০% অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এই নিয়ম গুলো মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

                                    মহামারীর শুরুতে সারা দেশে এমনকি  পুরো পৃথিবীতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল যাতে সংক্রমন কম ছরাতে পারে। কিন্তূ তা বেশি ফলদায়ী হইনি। তবে টিকাকরন ছাড়া একমাত্র সতর্কতাই পারে এই ভাইরাস এর সংক্রমন কমাতে। 

 টিকাকরনঃ-

                         বর্তমান পৃথিবী এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও টিকা আবিস্কার করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। ফলে বহু মানুষ এর প্রান বাচানো সম্ভব হইনি। যাই হোক, শেষে প্রচুর গভেষনার পর বিভিন্ন দেশে টিকা আবিস্কার সক্ষম হয়েছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল টিকা নিয়ে আসে এবং ট্রায়াল শুরু করে। পরবর্তী কালে রাশিয়া, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্বদেশী টিকা আবিস্কার করে।

                       আমাদের ভারতবর্ষও ভ্যাকসিন ট্রায়ালে পিছিয়ে থাকেনি। ভারতেরও দুটি সংস্থা টিকা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়। ভারতে ধাপে ধাপে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ডাক্তার, পুলিসকর্মী, সরকারি কর্মচারী যাদের কোন না কোন কারনে রোজ বাড়ি থেকে বাইরে যেতে লাগে, তাদেরকে টিকাকরন করা হবে। এরপর ৪৫ ঊর্ধ্ব যাদের বয়স তাদের এবং এরপর সাধারন মানুষদের টিকাকরন করা হবে। 

প্রভাবঃ-

 বিশ্বব্যাপী প্রভাবঃ-

                                 বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস এর প্রভাব অনেক বেশী। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং চোখের সামনে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। উন্নত থেকে অনুন্নত সব দেশই সমানভাবে আক্রান্ত। বিশেষ করে  ইউরোপীয় দেশগুলিতে অবস্থা খুব করুন। একসঙ্গে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় বিনা চিকিৎসায় প্রচুর মানুষ মারা গেছে।  চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুলিশকর্মী পর্যন্ত যারা সমাজের কাজে যুক্ত তারাও এই ভাইরাস থেকে রেহায় পাইনি। এখন পর্যন্ত প্রায় _______ মানুষ বিশ্ব ব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় _____ জন মারা গেছে।

ভারতে প্রভাবঃ- 

                           ভাইরাসটি ডিসেম্বরে ধরা পরলেও ভারতে এর প্রভাব মার্চ মাস থেকে শুরু হয়। যার কারনে মার্চ মাসের শেষ থেকে দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয় এবং চলে প্রায় ৬ মাস। কিন্তূ তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ভারতের জনসংখ্যা অনুযায়ী চিকিৎসা সরবরাহ ব্যাবস্থা কম হওয়ায় এটা ছিল সবচাইতে চিন্তার বিষয়। ভারতের জনঘনত্ব অনেক বেশী, যার কারনে যদি একসঙ্গে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে প্রচুর মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। তবে ভারতে অন্যান্য দেশের তুলনায় সুস্থতার হার বেশী হওয়ায় কিছুতা হলেও স্বস্তি পাওয়া গেছে।  ভারতেও এখন অব্দি প্রায় ______ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ______ মারা গেছে।

পরোক্ষ প্রভাবঃ- 

                          প্রত্যক্ষের পাশাপাশি পরোক্ষভাবেও করোনা প্রচণ্ডভাবে প্রভাব ফেলেছে। হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করায় মানুষ বাড়ি থেকে অনেক দূরে আটকে গিয়েছিল এবং বাড়ি আসার কোন  ব্যবস্থা ও পাচ্ছিলনা। ফলে পরে যায় মহাবিপদে । এমনও দেখা গেছে মানুষ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পায়ে হেটে রওনা দেয়। কারণ, এছাড়া আর কোন  উপায় ছিলনা। দিনমজুর লোকদের রোজগার সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায় এবং দেখা খাদ্যাভাব। প্রচুর ছুট ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় প্রচণ্ডভাবে আঘাত পরে। বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মুখে চলে আসে। বেড়ে যায় বেকারত্ব।  স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বুকে নেমে আসে অনাহার, খাদ্যাভাব।

                         তাছাড়া শুরু হয় কালোবাজারী মাস্ক, স্যানিটাইজার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে। ফলে জিনিষের দামও প্রচণ্ডভাবে বাড়তে থাকে। তাই সাধারন মানুষ পরে আরও বিপদের মুখে। তবে,  এরই মধ্যে বহু সংখ্যক মানুষকে দেখা যায় গরীব মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াতে। ফলে কিছুটা হলেও তারা স্বস্তি পায়। 

উপসংহারঃ- 

                        কথায় আছে, যে জিনিষটা খালি চোখে দেখা যায়না তার প্রকোপ সবচেয়ে বেশী। তা, আরেকবার প্রমাণ করে দিল করোনা ভাইরাস। আবারও প্রমাণ হল যে যতই মানুষ উন্নত হয়ে যাক না কেন, সৃষ্টির কাছে সবসময় ছোটই থেকে যাবে।

                       হ্যাঁ, তবে এই অসুস্থ্য পৃথিবী ধীরে ধীরে নিজেকে সুস্থ্য করে তুলছে। লকডাউন শেষ হওয়ার পর এবং টিকা আসার পর পুনরায় পুরনো ছন্দে ফিরে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার পরবর্তী  পৃথিবীতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে এবং এর প্রভাব দেখা দেবে অর্থনীতি, পেশা, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই। 

                     দুর্যোগের এই মেঘ কাটিয়ে অবশ্যই  আমরা সুস্থ্য পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব, এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। নতুন এই পৃথিবীতে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে সর্বদা তাল মিলিয়ে চলাটাই সবার পক্ষে শ্রেয়। 

          আপনাদের মতামত অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন। 





















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ